নেফ্রন কি ? চিত্র সহ একটি নেফ্রনের বিভিন্ন অংশের গঠন ও কাজ ব্যাখ্যা করো
নেফ্রন কি ? চিত্র সহ একটি নেফ্রনের বিভিন্ন অংশের গঠন ও কাজ ব্যাখ্যা করো
নেফ্রন : নেফ্রন হল বৃক্কের গঠনমূলক ও কার্যমূলক একক । প্রতিটি বৃক্কে অসংখ্য কুন্ডলীকৃত নালিকা দেখতে পাওয়া যায়, এদের নেফ্রন (Nephron) বলে । একটি বৃক্কে প্রায় ১০ লক্ষ নেফ্রন থাকে ।
নেফ্রনের গঠন :
প্রতিটি নেফ্রন তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত ; যথা –
- ম্যালপিজিয়ান করপাসল
- বৃক্কীয় নালিকা
- সংগ্রাহী নালিকা
১. ম্যালপিজিয়ান করপাসল :
ম্যালপিজিয়ান করপাসল (Malpighian Corpuscle) হলো বৃক্কের কর্টেক্স অঞ্চলে অবস্থিত ফানেল আকৃতির অংশ যা নিন্মলিখিত ২টি অংশ নিয়ে গঠিত –
- গ্লোমেরিউলাস – গ্লোমেরিউলাস হল কুন্ডলীকৃত একপ্রকার ধমনী জালক যাহা দূষিত রেচন পদার্থযুক্ত রক্ত পরিশ্রুত করে । এই জালক রেনাল ধমনীর অংশবিশেষ । এই রেনাল ধমনীর একটি শাখা ম্যালপিজিয়ান করপাসলে প্রবেশ করে জালিকা সৃষ্টি করে আবার বেরিয়ে আসে ।গ্লোমেরিউলাসে রেনাল ধমনীর যে শাখাটি প্রবেশ করে তাকে অন্তর্মুখী ধমনীকা বলে ।
গ্লোমেরিউলাস থেকে রেনাল ধমনীর যে শাখাটি বেরিয়ে আসে তাকে বহির্মুখী ধমনীকা বলে । - ব্যাওমানের ক্যাপসুল – হল একটি আবরণী যা গ্লোমেরিউলাসকে বেষ্টন করে থাকে । এই অংশ গ্লোমেরিউলাস থাকে পরিস্রুত তরল সংগৃহিত করে ও বৃক্কীয় নালিকাতে প্রেরণ করে ।
২. বৃক্কীয় নালিকা :
ব্যাওমানের ক্যাপসুল হতে সংগ্রাহী নালিকা পর্যন্ত সূক্ষ পেচানো কুন্ডলীকৃত নালিকাকে বৃক্কীয় নালিকা বলে । এটি তিনটি অংশে বিভক্ত :-
- প্রথম অংশটি হল নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকা বা পরসংবর্ত নালিকা
- দ্বিতীয় অংশটি হলো U – আকৃতির হেনলীর লুপ (Henle’s loop)
- তৃতীয় বা শেষ অংশটি হল দূরবর্তী সংবর্ত নালিকা বা দূরসংবর্ত নালিকা
গ্লোমেরিউলাস থাকে নির্গত বহিঃমুখী ধমনীকে বৃক্কীয় নালিকার উপর অসংখ জালক সৃষ্টি করে পরে তা আবার যুক্ত হয়ে শিরা গঠনের মাধ্যমে বৃক্কীয় শিরার সাথে যুক্ত হয় ।
৩. সংগ্রাহী নালিকা :
প্রতিটি নেফ্রনের বৃক্কীয় নালিকার শেষ অংশ (দূরসংবর্ত নালিকা) যে অপেক্ষাকৃত মোটা নালীর সাথে যুক্ত থাকে, তাকে সংগ্রাহী নালিকা বলে । পরিস্রুত তরল , পুনঃশোষণের পর, সংগ্রাহী নালিকাতে মূত্ররূপে সঞ্চিত থাকে । পরে এই মূত্র গবিনীতে প্রবেশ করে ।
নেফ্রনের বিভিন্ন অংশের কাজ: নেফ্রনের বিভিন্ন অংশ ও তার কাজ নিন্মে উল্লেখিত করা হলো ।
নেফ্রনের বিভিন্ন অংশ | তাদের কাজ |
---|---|
1. ম্যালপিজিয়ান করপাসল | এটি বৃক্কের পরা পরিশ্রাবক রূপে কাজ করে |
i) গ্লোমেরিউলাস | রক্তের দূষিত পদার্থগুলিকে পরিস্রুত করে |
ii) ব্যাওমানের ক্যাপসুল | গ্লোমেরিউলাসকে ঢেকে রাখে এবং পরিস্রুত তরলকে বৃক্কীয় নালিকাতে প্রেরণ করে |
2. বৃক্কীয় নালিকা | বৃক্কীয় নালিকার প্রধান কাজ হলো পরিস্রুত তরলের পুনঃশোষণ করা |
i) পরসংবর্ত নালিকা | এটি তরলের মধ্যে উপস্থিত গ্লুকোজ, সোডিয়াম, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ক্রিয়েটিন, সালফেট, ফসফেট ইত্যাদি দরকারি জিনিস বিশ্লেষণ করে |
ii) হেনলীর লুপ | বৃক্কের এই অংশ জল ও সোডিয়াম আয়ন বিশ্লেষণ করে |
iii) দূরসংবর্ত নালিকা | এটি অতিরিক্ত জলের বিশ্লেষণে সাহায্য করে |
3. সংগ্রাহী নালিকা | নেফ্রনের এই অংশ পরিস্রুত ও পুনঃশোষণ তরলকে মূত্র রূপে সঞ্চিত করে গবিনীতে প্রেরণ করে |