কর্ণাটকের যুদ্ধ : ফরাসীদের পতন ও ইংরেজদের উত্থান
ভারতে ইউরোপীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পারস্পরিক সংঘর্ষ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা । ইউরোপীয় শক্তিদের মধ্যে ইংরেজ ও ফরাসীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয় । ফলস্বরূপ ভারতে শুরুহয় কর্ণাটকের যুদ্ধ । তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে এই দ্বন্দ্ব শেষ হয় –
- প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধ (১৭৪৬ – ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দ)
- দ্বিতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ (১৭৪৯ – ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দ)
- তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ (১৭৫৬ – ৬৩ খ্রিস্টাব্দ)
এই সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আলোচনা করা হল –
- Jean Law :– জিন ল ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতে French East India Company প্রতিষ্ঠা করে ।
- জোসেফ ডুপ্লে :- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে জোসেফ ডুপ্লে পন্ডিচেরির শাসনকর্তা নিযুক্ত হন । তিনি ভারতে ফরাসি সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন ।
- War of Austrian Succassion :- ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধ আরম্ভ হলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স বিরোধী হয়ে যায় ।
- আর্কটনগর :- কর্ণাটকের রাজধানী ছিল ।
প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধ (১৭৪৬ – ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দ) :-
- ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে এই যুদ্ধ হয় ।
- দোস্ত আলি :- কর্ণাটকের নবাব । ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে দোস্ত আলির মৃত্যু হয় । ফলে কর্ণাটকের সিংহাসন নিয়ে গোলযোগ দেখা যায় । নিজামের সাহায্যে আনোয়ারউদ্দিন কর্ণাটকের সিংহাসনে বসেন । দোস্ত আলির জামাতা চাঁদা সাহেব অন্যতম দাবিদার ।
- ১৭৪৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সেনাপতি কমডোর বার্নেট কিছু ফরাসী যুদ্ধ জাহাজ দখল করলে, দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় ।
- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মরিসাসের ফরাসী শাসনকর্তা লা বুরদানে মাদ্রাজ আক্রমণ করে । ফলে প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধ শুরু হয় । এই অবস্থায় ইংরেজরা কর্ণাটকের নবাব আনোয়ারউদ্দিনের সহায়তায় ফরাসীদের আক্রমণ করে । অমত অবস্থায় আনোয়ারউদ্দিন ১০০০০ সৈন্য নিয়ে ফরাসীদের বিরুধ্যে যুদ্ধ করেন ।
- মাইলাপুর বা সেন্ট থোমের যুদ্ধে এই বাহিনী ফরাসীদের (শাসনকর্তা ডুপ্লে) কাছে পরাজিত হয় । এই যুদ্ধ ছিল স্থলযুদ্ধে ইউরোপীয়দের কাছে ভারতীয়দের প্রথম পরাজয় ।
- আয়-লা-স্যাপল -এর সন্ধি :- ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ । ইউরোপে অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধের অবসান । এই সন্ধির শর্তানুসারে ভারতে ফরাসী ও ইংরেজদের মধ্যে প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধের অবসান ।
দ্বিতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ (১৭৪৯ – ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দ) :-
- এই সময় হায়দ্রাবাদের সিংহাসন নিয়ে নাসির জঙ্গ ও মুজফ্ফর জঙ্গের মধ্যে বিবাদ বাঁধে ।
- কর্ণাটকের সিংহাসন নিয়ে চাঁদ সাহেব ও আনোয়ারউদ্দিনের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে ।
- ডুপ্লে কর্নাটকের চাঁদ সাহেব ও হায়দ্রাবাদের মুজফ্ফর জঙ্গের পক্ষ নেন ।
- ইংরেজরা কর্নাটকের আনোয়ারউদ্দিন ও হায়দ্রাবাদের নাসির জঙ্গের পক্ষ নেন । এই যুদ্ধ দ্বিতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ নাম পরিচিত ।
- ইংরেজরা এই যুধ্যে জয়ী হন ।
- ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ আর্কট আক্রমণ করেন ও জয়ী হন ।
- ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে ডুপ্লের পরিবর্তে গডহু (Godehu) ফরাসী শাসক হন ও ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের সাথে সন্ধি করে দ্বিতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধের অবসান ঘটান । এই সন্ধির শর্তানুসারে একে অন্যের ঘাঁটিগুলি ফেরত দেন এবং স্থির হয় যে দেশীয় রাজাদের বিবাদে তারা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না ।
- সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ :- ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ ও আমেরিকায় সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ (Seven Year War) আরম্ভ হয় । ইউরোপ এই যুদ্ধ একপক্ষ ছিল – প্রাশিয়া ও তার মিত্রবর্গ এবং অন্য পক্ষে ছিল – অস্ট্রিয়া ও তার মিত্রবর্গ ।
তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ (১৭৫৬ – ৬৩ খ্রিস্টাব্দ) :-
- ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইংরেজ ও ফরাসীদের মধ্যে তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ শুরু হয় ।
- এই যুদ্ধের অঙ্গ হিসাবে রবার্ট ক্লাইভ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ফরাসীদের ঘাঁটি চন্দননগর দখল করে ।
- ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় সিরাজ-উদ-দৌলা ও ইংরেজদের মধ্যে পলাশীর যুদ্ধ হয় ।
- বন্দীবাসের যুদ্ধ :- ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সেনাপতি স্যার আয়ার কূট – এর কাছে ফরাসী সেনাপতি লালী পরাস্ত হন । ইংরেজের পন্ডিচেরী ও মাহে দখল করে । এই যুদ্ধ বন্দীবাসের যুদ্ধ নাম পরিচিত ।
- প্যারিসের সন্ধি (১৭৬৩ খ্রি 🙂 :- ইউরোপ ও আমেরিকায় সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের অবসান হয় । ভারতে ও ইংরেজ ও ফরাসীদের মধ্যে তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধের অবসান হয় ।
বিদরের যুদ্ধ :- ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের আচরণে বিক্ষুব্দ হয়ে ওলন্দাজরা বাংলার নবাব মীরজাফরের সাথে দেখা করেন । মীরজাফর কিছু সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন । কিন্তু মীরজাফরের উদ্দেশ্য ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করা ছিল না । তবুও ওলন্দাজরা ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে হুগলীর উপর আক্রমণ করে । কিন্তু ওলন্দাজরা এই যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয় । এটি বিদরের যুদ্ধ নাম পরিচিত ।